বর্তমান প্রযুক্তির যুগে স্মার্টফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। তবে সব ফোনের বাজেট একরকম নয়। অনেকেই সীমিত বাজেটে একটি ভালো ফোন খুঁজে থাকেন, বিশেষ করে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। এই বাজেটে ভালো ফোন খুঁজে পাওয়া কঠিন হলেও কিছু ব্র্যান্ড সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো পারফরম্যান্সের ফোন বাজারে নিয়ে এসেছে। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো ৫ হাজার টাকার মধ্যে মোবাইল ফোন গুলোর বৈশিষ্ট্য, সুবিধ এবং কেনার পরামর্শ।
কেন ৫ হাজার টাকার মধ্যে ভালো ফোন কেনা একটি চ্যালেঞ্জ?
৫ হাজার টাকার মধ্যে একটি ভালো ফোন খুঁজে পাওয়া চ্যালেঞ্জিং কারণ এই বাজেটে সাধারণত কম র্যাম, সীমিত স্টোরেজ, এবং কম মানের ক্যামেরা পাওয়া যায়। তবে সঠিকভাবে খুঁজলে কিছু ব্র্যান্ড রয়েছে যারা এই সীমিত বাজেটেও ভালো মানের ফোন সরবরাহ করে থাকে।
৫ হাজার টাকার মধ্যে ভালো মোবাইল। ৫ হাজার টাকার মধ্যে ভালো মোবাইল বাংলাদেশ
যারা ৫ হাজার টাকার মধ্যে একটি ভালো মোবাইল খুঁজছেন, তাদের জন্য বাজারে রয়েছে অনেক আকর্ষণীয় অপশন। এই আর্টিকেলে আমরা ৫ হাজার টাকার মধ্যে সেরা মোবাইল ফোনগুলো বিশ্লেষণ করব, যেগুলো বাজেটের মধ্যে থেকে ভালো পারফরম্যান্স, ব্যাটারি লাইফ, ক্যামেরা এবং ডিজাইন অফার করে। চলুন তাহলে আলোচনা করা যাক ৫ হাজার টাকার মধ্যে ভালো ফোন নিয়ে!
Walton Primo E11
চলুন বাংলাদেশি ব্র্যান্ড ওয়ালটনের একটি স্মার্টফোন সম্পর্কে জানি। যারা কম বাজেটে একটি ভালো ফোন খুঁজছেন, তাদের জন্য এটি হতে পারে দারুণ একটি পছন্দ। ওয়ালটন প্রিমো ই১১ মডেলটির মূল্য মাত্র ৪,২৯৯ টাকা। ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে মিডিয়াটেকের কোয়াড-কোর প্রসেসর। গ্রাফিক্সের জন্য রয়েছে পাওয়ার ভিআর জিই৮১০০ (PowerVR GE8100) জিপিইউ। এতে রয়েছে ১ জিবি র্যাম এবং ১৬ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ সুবিধা।
ওয়ালটন প্রিমো ১১ স্মার্টফোনের মূল বৈশিষ্ট্য
৫ ইঞ্চি স্ক্রিনের সাথে ৮৫৪×৪৮০ পিক্সেলের রেজোলিউশন
সামনে ও পেছনে ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা
১ জিবি র্যাম এবং ১৬ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ
ডুয়াল মাইক্রো সিম সাপোর্ট
৪জি নেটওয়ার্ক সুবিধা
২০০০ এমএএইচ ধারণক্ষমতার লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি
LG Aristo 2
এবার LG Aristo 2 স্মার্টফোনের কথা বলা যাক। বাংলাদেশের বাজারে এর মূল্য মাত্র ৪,৯৯০ টাকা। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড এলজির এই স্মার্টফোনটি ৫ ইঞ্চি আইপিএস এলসিডি টাচস্ক্রিন সহ ১৬ মিলিয়ন রঙ প্রদর্শন করতে সক্ষম। নেটওয়ার্ক সাপোর্ট হিসেবে রয়েছে ২জি, ৩জি এবং ৪জি প্রযুক্তি। এর পারফরম্যান্সের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে কোয়ালকম এমএসএম৮৯১৭ স্ন্যাপড্রাগন ৪২৫ চিপসেট। ফোনটিতে ২ জিবি র্যামের পাশাপাশি ১৬ জিবি অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ আছে। ফটোগ্রাফির জন্য রয়েছে ১৩ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরা এবং সেলফি তোলার জন্য ৫ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা।
LG Aristo 2 ফোনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
৫ ইঞ্চি স্ক্রিনের এই ফোনে রয়েছে ৭২০×১২৮০ পিক্সেলের রেজুলেশন।
২ জিবি র্যামের সাথে আছে ১৬ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ।
১৩ মেগাপিক্সেল রিয়ার ক্যামেরা এবং ৫ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা।
৪জি নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করে, যা দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা দেয়।
২৪১০ এমএএইচ ক্ষমতাসম্পন্ন লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি দ্বারা পরিচালিত।
Itel A25
নতুন বাজেট ফোন আইটেল এ২৫ স্মার্টফোনটি বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪,৯৯০ টাকায়। এই স্মার্টফোনটির ৫ ইঞ্চি আকারের উজ্জ্বল ডিসপ্লে রয়েছে, যার রেজুলেশন ৭২০×১০৮০ পিক্সেল। এর শক্তিশালী কোয়াড কোর ১.৪ গিগাহার্জ সিপিইউ এবং স্প্রেডট্রাম এসসি৯৮৩২ই চিপসেটের সাথে পারফরম্যান্স যথেষ্ট ভালো। ফোনটির সামনে ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা এবং পেছনে ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা রয়েছে। স্মার্টফোনটি ১ জিবি র্যাম এবং ১৬ জিবি ইন্টার্নাল মেমোরি সহ আসে, যার মাধ্যমে আপনি মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহার করে অতিরিক্ত মেমোরি বাড়াতে পারবেন। এই ফোনটি দুটি চমৎকার রঙে—গ্র্যাডিয়েন্ট ব্ল্যাক ও গ্র্যাডিয়েন্ট ব্লু—এ উপলব্ধ। ৩০২০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি দিয়ে ফোনটি দীর্ঘ সময় চলতে সক্ষম।
Itel A25 স্মার্টফোনের মূল বৈশিষ্ট্য
Itel A25 স্মার্টফোনের ডিসপ্লে: ৫ ইঞ্চি আকারের ডিসপ্লে, রেজুলেশন ৭২০×১০৮০ পিক্সেল
ক্যামেরা: সেলফি ক্যামেরা ২ মেগাপিক্সেল এবং পিছনের ক্যামেরা ৫ মেগাপিক্সেল
র্যাম এবং স্টোরেজ: ১ জিবি র্যাম এবং ১৬ জিবি ইন্টার্নাল মেমোরি
ব্যাটারি: ৩০২০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি
Lava Iris42
Lava Iris42 ব্ল্যাক স্মার্টফোনের মূল্য ৪৭৯০ টাকা। এই স্মার্টফোনটি ৪জি নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করে এবং এতে রয়েছে ৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে। ফোনটির ১GB র্যাম এবং ৮GB রম রয়েছে, যা ৬৪GB পর্যন্ত এক্সটার্নাল মেমোরি সমর্থন করে। ক্যামেরা হিসেবে সামনে রয়েছে ৫ মেগাপিক্সেল এবং পিছনে রয়েছে ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। এছাড়া, এতে ২০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন লায়ন ব্যাটারি দেওয়া হয়েছে।
Lava Iris 42 মোবাইলের বৈশিষ্ট্য:
২০০০ mAh ব্যাটারি
৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে, রেজুলেশন ৪৮০×৯৬০
মিডিয়াটেক(MT6737) কোয়াডকোর প্রসেসর
১ GB র্যাম এবং ৮ GB রম
পিছনের ক্যামেরা ৫ মেগাপিক্সেল এবং সেলফি ক্যামেরা ২ মেগাপিক্সেল
Walton Primo E10
ওয়ালটন প্রিমো ই১০ স্মার্টফোনটি পাওয়া যাচ্ছে চারটি আকর্ষণীয় রঙে—ব্লু, লাইট ব্লু, পার্পল, এবং রেড। এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪,৫০০ টাকা।
ফোনটিতে রয়েছে ৫১২ এমবি র্যাম এবং ৮ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ, যা ৬৪ জিবি পর্যন্ত মাইক্রো এসডি কার্ডের মাধ্যমে বাড়ানো সম্ভব। ৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে প্রটেকশনে ব্যবহৃত হয়েছে ২.৫ডি কার্ভ গ্লাস।
পারফরম্যান্স বজায় রাখতে এতে রয়েছে ২,০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার লায়ন ব্যাটারি। ক্যামেরা হিসেবে আছে ৫ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরা এবং ২ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা সেলফির জন্য।
Walton Primo E10 মোবাইলের বৈশিষ্ট্য:
২০০০ mAh লি-আয়ন ব্যাটারি
৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে (রেজোলিউশন: 480 x 854 পিক্সেল, 18:9 রেশিও)
কোয়াড-কোর প্রসেসর
৫১২ এমবি র্যাম এবং ৮ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ
৫ মেগাপিক্সেল রিয়ার ক্যামেরা ও ২ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা
Micromax Bolt Q381
১ জিবি র্যাম ও ৮ জিবি রমের এই স্মার্টফোনে ডুয়েল সিম ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে, সাথে আছে ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ এবং গ্রাভিটি সেন্সরসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য ফিচার।
ফোনটির রিয়ার ক্যামেরা ৫ মেগাপিক্সেলের, আর ফ্রন্ট ক্যামেরা ০.৩ মেগাপিক্সেল। ২০০০ এমএএইচ শক্তিশালী ব্যাটারি দিয়ে আপনি পেতে পারেন প্রায় ৯ ঘণ্টা টকটাইম ও ১৮০ ঘণ্টা স্ট্যান্ডবাই সময়। মাইক্রোম্যাক্স বোল্ট কিউ ৩৮১ মডেলের এই ফোনের দাম ৪,৮৯০ টাকা।
Micromax Bolt Q381 মোবাইলের বৈশিষ্ট্য:
মেমোরি: ১ জিবি র্যাম এবং ৮ জিবি রম, যা মাইক্রোএসডি কার্ডের মাধ্যমে বাড়ানো যায়।
ডুয়েল সিম সুবিধা: একসাথে দুটি সিম ব্যবহারের সুবিধা।
ক্যামেরা: পেছনে ৫ মেগাপিক্সেল এবং সামনে ০.৩ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা।
ব্যাটারি পারফরম্যান্স: ২০০০ এমএএইচ ব্যাটারি, যা ৯ ঘণ্টা টকটাইম এবং ১৮০ ঘণ্টা স্ট্যান্ডবাই টাইম প্রদান করে।
সংযোগ সুবিধা: ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ এবং গ্রাভিটি সেন্সরসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কানেক্টিভিটি অপশন।
মূল্য: বাংলাদেশের বাজারে ফোনটির দাম ৪,৮৯০ টাকা।
কোন ফোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত?
যদি আপনি ৪জি সাপোর্ট চান, তাহলে itel A23 Pro এবং Micromax Bharat 2 Plus ভালো অপশন হতে পারে। যারা ফটোগ্রাফি পছন্দ করেন, তাদের জন্য Nokia C1 তুলনামূলক ভালো। সহজ ব্যবহারের জন্য Symphony V145 এবং Walton Primo E9 একটি ভালো পছন্দ হতে পারে।
ফোন কেনার সময় যে বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন
ব্যাটারি লাইফ: ব্যাটারির ক্ষমতা বেশি থাকলে ফোন দীর্ঘ সময় চলবে।
র্যাম ও প্রসেসর: ভালো পারফরম্যান্সের জন্য বেশি র্যাম ও শক্তিশালী প্রসেসর প্রয়োজন।
ক্যামেরা: যারা ছবি তুলতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য ভালো মানের ক্যামেরা জরুরি।
স্টোরেজ: বেশি ইন্টারনাল স্টোরেজ থাকলে অ্যাপ এবং ফাইল সহজে রাখা যায়।
4G সাপোর্ট: দ্রুত ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ৪জি সাপোর্ট থাকা জরুরি।
শেষকথা,৫ হাজার টাকার মধ্যে ভালো মোবাইল বাছাই করা সহজ নয়, তবে সঠিকভাবে খুঁজলে কিছু মানসম্মত ফোন পাওয়া যায়। আপনি যদি ফোনের ব্যাটারি লাইফ, ক্যামেরা, পারফরম্যান্স এবং ৪জি সাপোর্ট বিবেচনা করেন, তবে এই তালিকায় উল্লেখিত ফোনগুলোর মধ্যে থেকে আপনার জন্য উপযুক্ত একটি ফোন বেছে নিতে পারবেন। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ফোনের ফিচার এবং পারফরম্যান্স যাচাই করে নেয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ছিল ৫ হাজার টাকার মধ্যে ভালো ফোন নিয়ে আলোচনা করা। আশাকরি উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আপনারা উপকৃত হবেন।
৫ হাজার টাকার মধ্যে ভালো ফোন নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং উত্তর/ FAQ
প্রশ্ন: ৫ হাজার টাকার মধ্যে ভালো স্মার্টফোন কি পাওয়া যাবে?
উত্তর: বর্তমান সময়ে ৫০০০ টাকার বাজেটের মধ্যে বেশ কিছু ভালো মানের অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। এই বাজেটের মধ্যে জনপ্রিয় কিছু ব্র্যান্ড যেমন সিম্ফোনি, মাইক্রোম্যাক্স, লাভা, নকিয়া এবং স্যামসাং বিভিন্ন আকর্ষণীয় ফিচারের ফোন সরবরাহ করে। এই ব্র্যান্ডগুলোর ফোনগুলোতে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত পারফরম্যান্স এবং নির্ভরযোগ্যতা পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: কেন ৫ হাজার টাকার মধ্যে মোবাইল নির্বাচন করবেন?
উত্তর:বাজেট ফ্রেন্ডলি: এই রেঞ্জের মোবাইলগুলো সাশ্রয়ী এবং শিক্ষার্থী বা সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য উপযুক্ত।
বেসিক ফিচারস: সাধারণ কল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট।
সহজে পাওয়া যায়: বাজারে সহজলভ্য এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ড থেকে পাওয়া যায়।